গাণিতিক সমস্যা সমাধানের জন্য বীজগণিতের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো সমীকরণ। ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে আমরা সরল সমীকরণের ধারণা পেয়েছি এবং কীভাবে এক চলকবিশিষ্ট সরল সমীকরণ সমাধান করতে হয় তা জেনেছি। অষ্টম শ্রেণিতে সরল সমীকরণ প্রতিস্থাপন ও অপনয়ন পদ্ধতিতে এবং লেখচিত্রের সাহায্যে সমাধান করেছি। কীভাবে বাস্তবভিত্তিক সমস্যার সরল সহসমীকরণ গঠন করে সমাধান করা হয় তাও শিখেছি। এ অধ্যায়ে সরল সহসমীকরণের ধারণা সম্প্রসারণ করা হয়েছে ও সমাধানের আরো নতুন পদ্ধতি সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। এ ছাড়াও এ অধ্যায়ে লেখচিত্রের সাহায্যে সমাধান ও বাস্তবভিত্তিক সমস্যার সহসমীকরণ গঠন ও সমাধান সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
এ অধ্যায় শেষে শিক্ষার্থীরা ---
সরল সহসমীকরণ বলতে দুই চলকবিশিষ্ট দুইটি সরল সমীকরণকে বুঝায় যখন এদের একত্রে উপস্থাপন করা হয় এবং চলক দুইটি একই বৈশিষ্টের হয়। আবার এরূপ দুইটি সমীকরণকে একত্রে সরল সমীকরণজোটও বলে। অষ্টম শ্রেণিতে আমরা এরূপ সমীকরণজোটের সমাধান করেছি ও বাস্তবভিত্তিক সমস্যার সহসমীকরণ গঠন করে সমাধান করতে শিখেছি। এ অধ্যায়ে এ সম্পর্কে আরো বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
প্রথমে আমরা 2x + y = 12 সমীকরণটি বিবেচনা করি। এটি একটি দুই চলকবিশিষ্ট সরল সমীকরণ। = সমীকরণটিতে বামপক্ষে x ও এর এমন মান পাওয়া যাবে কি যাদের প্রথমটির দ্বিগুণের সাথে দ্বিতীয়টির যোগফল ডানপক্ষের 12 এর সমান হয়, অর্থাৎ ঐ মান দুইটি দ্বারা সমীকরণটি সিদ্ধ হয়?
এখন, 2x + y = 12 সমীকরণটি থেকে নিচের ছকটি পূরণ করি :
সমীকরণটির অসংখ্য সমাধান আছে। তার মধ্যে চারটি সমাধান : ( - 2, 16), (0, 12 ), ( 3, 6), ( 5, 2 ) ।
আবার, অন্য একটি সমীকরণ x - y = 3 নিয়ে নিচের ছকটি পূরণ করি :
সমীকরণটির অসংখ্য সমাধান আছে। তার মধ্যে চারটি সমাধান : ( – 2, – 5), (0, – 3), ( 3,0), ( 5, 2 ) ।
যদি আলোচ্য সমীকরণ দুইটিকে একত্রে জোট হিসেবে ধরা হয়, তবে একমাত্র (5,2) দ্বারা উভয় সমীকরণ যুগপৎ সিদ্ধ হয়। আর অন্য কোনো মান দ্বারা উভয় সমীকরণ যুগপৎ সিদ্ধ হবে না।
অতএব, সমীকরণজোট 2x + y = 12 এবং x – y = 3 এর সমাধান: (x, y) = (5,2)
কাজ : x – 2y + 1 = 0 ও 2x + y - 3 = 0 সমীকরণদ্বয়ের প্রত্যেকটির পাঁচটি করে সমাধান লিখ যেন তন্মধ্যে সাধারণ সমাধানটিও থাকে। |
দুই চলকবিশিষ্ট সরল সহসমীকরণের সমাধান যোগ্যতা
ক)
সমঞ্জস ও পরস্পর অনির্ভরশীল সমীকরণজোটের ক্ষেত্রে অনুপাতগুলো সমান নয়। এক্ষেত্রে ধ্রুবকপদ তুলনা করার প্রয়োজন হয় না।
খ)
এখানে, ১ম সমীকরণটির উভয়পক্ষকে 2 দ্বারা গুণ করলে ২য় সমীকরণটি পাওয়া যাবে। আবার, ২য় সমীকরণের উভয়পক্ষকে 2 দ্বারা ভাগ করলে ১ম সমীকরণটি পাওয়া যাবে। অর্থাৎ, সমীকরণ দুইটি পরস্পর নির্ভরশীল।
আমরা জানি, ১ম সমীকরণটির অসংখ্য সমাধান আছে। কাজেই, ২য় সমীকরণটিরও ঐ একই অসংখ্য সমাধান আছে। এরূপ সমীকরণজোটকে সমঞ্জস ও পরস্পর নির্ভরশীল (dependent) সমীকরণজোট বলে। এরূপ সমীকরণজোটের অসংখ্য সমাধান আছে।
অর্থাৎ, সমঞ্জস ও পরস্পর নির্ভরশীল সমীকরণজোটের ক্ষেত্রে অনুপাতগুলো সমান হয়।
গ)
এখানে, ১ম সমীকরণটির উভয়পক্ষকে 2 দ্বারা গুণ করে পাই, 4x + 2y = 24
২য় সমীকরণটি, 4x + 2y = 5
বিয়োগ করে পাই, 0 = 19 যা অসম্ভব।
কাজেই বলতে পারি, এ ধরনের সমীকরণজোট সমাধান করা সম্ভব নয়। এরূপ সমীকরণজোট অসমঞ্জস (inconsistent) ও পরস্পর অনির্ভরশীল। এরূপ সমীকরণজোটের কোনো সমাধান নেই ।
এখানে সমীকরণ দুইটির x ও y এর সহগ এবং ধ্রুবক পদ তুলনা করে পাই,
অর্থাৎ, অসমঞ্জস ও পরস্পর অনির্ভরশীল সমীকরণজোটের ক্ষেত্রে চলকের সহগের অনুপাতগুলো ধ্রুবকের অনুপাতের সমান নয়।
এখন, যদি কোনো সমীকরণজোটে উভয় সমীকরণে ধ্রুবক পদ না থাকে, অর্থাৎ, হয়, তবে ছকের
উদাহরণ ১. নিচের সমীকরণজোটগুলো সমঞ্জস/অসমঞ্জস, নির্ভরশীল/অনির্ভরশীল কি না ব্যাখ্যা কর এবং এদের সমাধানের সংখ্যা নির্দেশ কর।
সমাধান :
অতএব, সমীকরণজোটটি সমঞ্জস ও পরস্পর নির্ভরশীল। সমীকরণজোটটির অসংখ্য সমাধান আছে।
সমীকরণজোটটি সমঞ্জস ও পরস্পর অনির্ভরশীল। সমীকরণজোটটির একটিমাত্র (অনন্য সমাধান আছে।
সমীকরণজোটটি অসমঞ্জস ও পরস্পর অনির্ভরশীল। সমীকরণজোটটির কোনো সমাধান নেই।
কাজ : x – 2y + 1 = 0, 2x + y - 3 = 0 সমীকরণজোটটি সমঞ্জস কি না, পরস্পর নির্ভরশীল কি না যাচাই কর এবং সমীকরণজোটটির কয়টি সমাধান থাকতে পারে তা নির্দেশ কর। |
আমরা শুধু সমঞ্জস ও পরস্পর অনির্ভরশীল সরল সহসমীকরণের সমাধান সম্পর্কে আলোচনা করবো। এরূপ সমীকরণজোটের একটিমাত্র (অনন্য) সমাধান আছে।
এখানে, সমাধানের চারটি পদ্ধতির উল্লেখ করা হলো :
১. প্রতিস্থাপন পদ্ধতি ২. অপনয়ন পদ্ধতি ৩. আড়গুণন পদ্ধতি ও ৪. লৈখিক পদ্ধতি।
আমরা অষ্টম শ্রেণিতে প্রতিস্থাপন ও অপনয়ন পদ্ধতিতে সমাধান কীভাবে করতে হয় জেনেছি। এ দুই পদ্ধতির একটি করে উদাহরণ দেওয়া হলো :
উদাহরণ ২. প্রতিস্থাপন পদ্ধতিতে সমাধান কর :
2x + y = 8
3x - 2y = 5
সমাধান : প্রদত্ত সমীকরণদ্বয়
2x + y = 8 ... (1)
3x - 2y = 5 ... (2)
সমীকরণ (1) হতে পাই, y = 8 – 2x ... (3)
সমীকরণ (2) এ y এর মান ৪ – 2x বসিয়ে পাই,
3x - 2(8 – 2x) = 5
বা, 3r - 16 + 4x = 5
বা, 7x = 5 + 16
বা, 7x = 21
বা, x = 3
x এর মান সমীকরণ (3) এ বসিয়ে পাই,
y = 8 - 2 × 3
বা, y = 8 – 6
বা, y = 2
সমাধান (x, y) = (3, 2)
প্রতিস্থাপন পদ্ধতি (Substitution method): সুবিধামত একটি সমীকরণ থেকে একটি চলকের মান অপর চলকের মাধ্যমে প্রকাশ করে প্রাপ্ত মান অপর সমীকরণে বসালে এক চলকবিশিষ্ট সমীকরণ পাওয়া যায়। অতঃপর সমীকরণটি সমাধান করে চলকটির মান পাওয়া যায়। এই মান প্রদত্ত সমীকরণের যে কোনোটিতে বসানো যেতে পারে। তবে যেখানে একটি চলককে অপর চলকের মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়েছে সেখানে বসালে সমাধান সহজ হয়। এখান থেকে অপর চলকের মান পাওয়া যায়।
উদাহরণ ৩. অপনয়ন পদ্ধতিতে সমাধান কর :
2x + y = 8
3x - 2y = 5
দ্রষ্টব্য : প্রতিস্থাপন ও অপনয়ন পদ্ধতির পার্থক্য বুঝাতেই উদাহরণ ২ এর সমীকরণদ্বয়ই উদাহরণ ৩ এ নেয়া হলো।
সমাধান : প্রদত্ত সমীকরণদ্বয়
2x + y = 8 ... (1)
3x - 2y = 5 ... (2)
সমীকরণ (1) এর উভয়পক্ষকে 2 দ্বারা গুণ করে, 4x + 2y = 16 ... (3)
সমীকরণ (2) ও (3) যোগ করে পাই,
7x = 21
বা, x = 3
x এর মান সমীকরণ (1) এ বসিয়ে পাই,
2 × 3 + y = 8
বা, y = 8 – 6
বা, y = 2
সমাধান (x, y) = (3, 2)
অপনয়ন পদ্ধতি (Elimination method) : সুবিধামত একটি সমীকরণকে বা উভয় সমীকরণকে এরূপ সংখ্যা দিয়ে গুণ করতে হবে যেন গুণনের পর উভয় সমীকরণের যেকোনো একটি চলকের সহগের পরমমান সমান হয়। এরপর প্রয়োজনমত সমীকরণ দুইটিকে যোগ বা বিয়োগ করলে সহ সমানকৃত চলকটি অপনীত বা অপসারিত হয়। তারপর সমীকরণটি সমাধান করলে বিদ্যমান চলকটির মান পাওয়া যায়। ঐ মান সুবিধামত প্রদত্ত সমীকরণদ্বয়ের যেকোনোটিতে বসালে অপর চলকটির মান পাওয়া যায়।
আড়গুণন পদ্ধতি (Cross multiplication method) :
আড়গুণন পদ্ধতিকে বজ্রগুণন পদ্ধতিও বলে।
নিচের সমীকরণ দুইটি বিবেচনা করি :
সমীকরণ (1) কে b2 দিয়ে ও সমীকরণ (2) কে দিয়ে গুণ করে পাই,
সমীকরণ (3) থেকে সমীকরণ (4) বিয়োগ করে পাই,
আবার, সমীকরণ (1) কে দিয়ে ও সমীকরণ (2) কে দিয়ে গুণ করে পাই,
সমীকরণ (6) থেকে সমীকরণ (7) বিয়োগ করে পাই,
সমীকরণ (5) ও (8) থেকে পাই,
x ও y এর এরূপ সম্পর্ক থেকে এদের মান নির্ণয়ের কৌশলকে আড়গুণন পদ্ধতি বলে।
x ও y এর উল্লেখিত সম্পর্ক থেকে পাই,
লক্ষ করি :
দ্রষ্টব্য : প্রদত্ত উভয় সমীকরণের ধ্রুবক পদ ডানপক্ষে রেখেও আড়গুণন পদ্ধতি প্রয়োগ করা যায়। তবে সেক্ষেত্রে চিহ্নের কিছু পরিবর্তন হবে। কিন্তু সমাধান একই পাওয়া যাবে।
উদাহরণ ৪. আড়গুণন পদ্ধতিতে সমাধান কর :
6x – y = 1
3x + 2y = 13
সমাধান : পক্ষান্তর প্রক্রিয়ায় প্রদত্ত সমীকরণদ্বয়ের ডানপক্ষ 0 (শূন্য) করে পাই,
6x – y – 1 = 0
3x + 2y – 13 = 0
সমীকরণদ্বয়কে যথাক্রমে
এর সাথে তুলনা করে পাই,
আড়গুণন পদ্ধতিতে পাই,
উদাহরণ ৫. আড়গুণন পদ্ধতিতে সমাধান কর :
3x - 4y = 0
2x - 3y = - 1
সমাধান : প্রদত্ত সমীকরণদ্বয়
আড়গুণন পদ্ধতিতে পাই,
উদাহরণ ৬. আড়গুণন পদ্ধতিতে সমাধান কর :
সমাধান: প্রদত্ত সমীকরণদ্বয়কে ax + by + c = 0 আকারে সাজিয়ে পাই,
সমীকরণদ্বয়
3x + 2y - 48 = 0
5x - 12y + 12 = 0
আড়গুণন পদ্ধতিতে পাই,
সমাধানের শুদ্ধি পরীক্ষা: প্রাপ্ত x ও y এর মান প্রদত্ত সমীকরণে বসিয়ে পাই,
সমাধান শুদ্ধ হয়েছে।
উদাহরণ ৭. আড়গুণন পদ্ধতিতে সমাধান কর : ax - by = ab = bx - ay
সমাধান : প্রদত্ত সমীকরণদ্বয়,
আড়গুণন পদ্ধতিতে পাই,
লৈখিক পদ্ধতি (Graphical Method)
দুই চলকবিশিষ্ট একটি সরল সমীকরণে বিদ্যমান চলক x ও y এর সম্পর্ককে চিত্রের সাহায্যে প্ৰকাশ করা যায়। এই চিত্রকে ঐ সম্পর্কের লেখচিত্র বলে। এ জাতীয় সমীকরণের লেখচিত্রে অসংখ্য বিন্দু থাকে। এরূপ কয়েকটি বিন্দু স্থাপন করে এদের পরস্পর সংযুক্ত করলেই লেখচিত্র পাওয়া যায়।
সরল সহসমীকরণের প্রত্যেকটির অসংখ্য সমাধান রয়েছে। প্রত্যেকটি সমীকরণের লেখ একটি সরলরেখা। সরলরেখাটির প্রত্যেকটি বিন্দুর স্থানাঙ্ক সমীকরণটিকে সিদ্ধ করে। কোনো লেখ নির্দিষ্ট করতে তিন বা ততোধিক বিন্দু আবশ্যক। এখন আমরা নিচের সমীকরণজোটটি সমাধান করার চেষ্টা করবো :
2x + y = 3 … (1)
4x + 2y = 6 ... (2)
সমীকরণ (1) থেকে পাই, y=3-2x ।
সমীকরণটিতে x এর কয়েকটি মান নিয়ে y এর অনুরূপ মান বের করি ও নিম্নের ছকটি তৈরি করি :
x | -1 | 0 | 3 |
---|---|---|---|
y | 5 | 3 | -3 |
সমীকরণটির লেখের উপর তিনটি বিন্দু (–1, 5), (0, 3) ও (3, − 3 ) ।
আবার, সমীকরণ (2) থেকে পাই,
সমীকরণটিতে x এর কয়েকটি মান নিয়ে y এর অনুরূপে মান বের করি ও নিম্নের ছকটি তৈরি করি :
x | -2 | 0 | 6 |
---|---|---|---|
y | 7 | 3 | -9 |
সমীকরণটির লেখের উপর তিনটি বিন্দু (−2, 7), (0, 3 ) ও ( 6, 9 )।
মনে করি, ছক কাগজে XOX' ও YOY' যথাক্রমে x-অক্ষ ও Y-অক্ষ এবং O মূলবিন্দু।
ছক কাগজের উভয় অক্ষ বরাবর ক্ষুদ্রতম বর্গক্ষেত্রের প্রতি বাহুর দৈর্ঘ্যকে একক ধরি। এখন সমীকরণ (1) হতে প্রাপ্ত (–1, 5), (0, 3) ও (3, − 3) বিন্দুগুলো স্থাপন করি ও এদের পরস্পর সংযুক্ত করি। লেখটি একটি সরলরেখা।
আবার, সমীকরণ (2) হতে প্রাপ্ত (−2, 7), (0, 3) ও (6, – 9 ) বিন্দুগুলো স্থাপন করি ও এদের পরস্পর সংযুক্ত করি। এক্ষেত্রেও লেখটি একটি সরলরেখা।
তবে লক্ষ করি, সরলরেখা দুইটি পরস্পরের উপর সমাপতিত হয়ে একটি সরলরেখায় পরিণত হয়েছে। আবার, সমীকরণ (2) এর উভয়পক্ষকে 2 দ্বারা ভাগ করলে সমীকরণ (1) পাওয়া যায়। এ কারণে সমীকরণদ্বয়ের লেখ পরস্পর সমাপতিত হয়েছে।
সমীকরণটিতে x এর কয়েকটি মান নিয়ে y এর অনুরূপ মান বের করি ও নিম্নের ছকটি তৈরি করি :
সমীকরণটির লেখের উপর তিনটি বিন্দু (–1, – 6), (0, – 4), ( 4, 4)।
আবার, সমীকরণ (2) থেকে পাই,
4x – 2y = 12, বা, 2x – y = 6 [উভয়পক্ষকে 2 দ্বারা ভাগ করে]
বা, y = 2x – 6
সমীকরণটিতে x এর কয়েকটি মান নিয়ে y এর অনুরূপ মান বের করি ও নিম্নের ছকটি তৈরি করি :
সমীকরণটির লেখের উপর তিনটি বিন্দু (0, – 6), (3,0), (6, 6) ।
মনে করি, ছক কাগজে XOX' ও YOY' যথাক্রমে x-অক্ষ ও y-অক্ষ এবং O মূলবিন্দু। ছক কাগজের উভয় অক্ষ বরাবর ক্ষুদ্রতম বর্গক্ষেত্রের প্রতিবাহুর দৈর্ঘ্যকে একক ধরে সমীকরণ (1) হতে প্রাপ্ত (–1, – 6), (0, – 4 ) ও ( 4, 4 ) বিন্দুগুলো স্থাপন করি ও এদের পরস্পর সংযুক্ত করি। লেখটি একটি সরলরেখা।
আবার, সমীকরণ (2) হতে প্রাপ্ত (0, – 6), (3,0), (6, 6) বিন্দুগুলো স্থাপন করি ও এদের পরস্পর সংযুক্ত করি। এক্ষেত্রেও লেখটি একটি সরলরেখা।
চিত্রে লক্ষ করি, প্রদত্ত সমীকরণদ্বয়ের পৃথকভাবে প্রত্যেকটির অসংখ্য সমাধান থাকলেও জোট হিসেবে এদের সাধারণ সমাধান নেই। আরও লক্ষ করি যে, প্রদত্ত সমীকরণ দুইটির লেখচিত্র দুইটি পরস্পর সমান্তরাল সরলরেখা। অর্থাৎ, রেখা দুইটি কখনো একে অপরকে ছেদ করবে না। অতএব, এদের কোনো সাধারণ ছেদ বিন্দু পাওয়া যাবে না। এ ক্ষেত্রে আমরা বলি যে, এরূপ সমীকরণজোটের কোনো সমাধান নেই। আমরা জানি, এরূপ সমীকরণজোট অসমঞ্জস ও পরস্পর অনির্ভরশীল।
আমরা এখন লেখচিত্রের সাহায্যে সমঞ্জস ও পরস্পর অনির্ভরশীল সমীকরণজোট সমাধান করবো।
দুই চলকবিশিষ্ট দুইটি সমঞ্জস ও পরস্পর অনির্ভরশীল সরল সমীকরণের লেখ একটি বিন্দুতে ছেদ করে। ঐ ছেদ বিন্দুর স্থানাঙ্ক দ্বারা উভয় সমীকরণ সিদ্ধ হবে। ছেদবিন্দুটির স্থানাঙ্কই হবে সমীকরণদ্বয়ের সমাধান।
উদাহরণ ৮. সমাধান কর ও সমাধান লেখচিত্রে দেখাও :
2x + y = 8
3x - 2y – 5
সমাধান : প্রদত্ত সমীকরণদ্বয়
2x + y – 8 = 0 ... (1)
3x - 2y 5 = 0 ...(2)
আড়গুণন পদ্ধতিতে পাই,
সমাধান : (x, y) = (3, 2)
মনে করি, XOX' ও YOY' যথাক্রমে x-অক্ষ ও y-অক্ষ এবং O মূলবিন্দু। ছক কাগজের উভয় অক্ষ বরাবর ক্ষুদ্রতম বর্গের প্রতি দুই বাহুর দৈর্ঘ্যকে একক ধরে (3,2) বিন্দুটি স্থাপন করি।
উদাহরণ ৯. লেখচিত্রের সাহায্যে সমাধান কর :
3x - y = 3
5x + y = 21
সমাধান : প্রদত্ত সমীকরণদ্বয়
3x – y = 3 . . . (1)
5x + y = 21 . . . (2)
সমীকরণ (1) থেকে পাই, 3x - y = 3, বা, y = 3x - 3
সমীকরণটিতে x এর কয়েকটি মান নিয়ে y এর অনুরূপ মান বের করি ও নিম্নের ছকটি তৈরি করি :
সমীকরণটির লেখের উপর তিনটি বিন্দু (–1, – 6), (0, – 3), (3, 6)
আবার, সমীকরণ (2) থেকে পাই, 5x + y = 21, বা, y = 21 – 52
সমীকরণটিতে x এর কয়েকটি মান নিয়ে y এর অনুরূপ মান বের করি ও নিম্নের ছকটি তৈরি করি :
সমীকরণটির লেখের উপর তিনটি বিন্দু (3, 6), ( 4, 1), (5, – 4) ।
মনে করি, XOX' ও YOY' যথাক্রমে x-অক্ষ ও y-অক্ষ এবং O মূলবিন্দু। ছক কাগজের উভয় অক্ষ বরাবর ক্ষুদ্রতম বর্গের প্রতি বাহুর দৈর্ঘ্যকে একক ধরি। এখন ছক কাগজে সমীকরণ (1) হতে প্রাপ্ত (–1, – 6), (0, – 3), ( 3, 6 ) বিন্দুগুলো স্থাপন করি ও এদের পরস্পর সংযুক্ত করি। লেখটি একটি সরলরেখা।
একইভাবে, সমীকরণ (2) হতে প্রাপ্ত (3, 6), ( 4, 1 ), ( 5, – 4 ) বিন্দুগুলো স্থাপন করি ও এদের পরস্পর সংযুক্ত করি। এক্ষেত্রেও লেখটি একটি সরলরেখা।
মনে করি, সরলরেখাদ্বয় পরস্পর P বিন্দুতে ছেদ করেছে। চিত্র থেকে দেখা যায়, P বিন্দুর স্থানাঙ্ক (3, 6)
সমাধান: (x, y) = ( 3, 6)
উদাহরণ ১০. লৈখিক পদ্ধতিতে সমাধান কর :
2x + 5y = −14
4x – 5y = 17
সমাধান : প্রদত্ত সমীকরণদ্বয়
2x + 5y = - 14 . . . (1)
4x - 5y = 17. . . (2)
সমীকরণটিতে x এর সুবিধামত কয়েকটি মান নিয়ে y এর অনুরূপ মান বের করি ও নিম্নের ছকটি তৈরি করি :
সমীকরণটিতে x এর সুবিধামত কয়েকটি মান নিয়ে y এর অনুরূপ মান বের করি ও নিম্নের ছকটি তৈরি করি :
আবার, সমীকরণ (2) এ x-এর কয়েকটি মান নিয়ে y-এর অনুরূপ মান বের করি ও নিম্নের ছকটি তৈরি করি :
সমীকরণটির লেখের উপর তিনটি বিন্দু (1, 4), (2, 0 ), ( 3, –4)
মনে করি, XOX' ও YOY' যথাক্রমে x-অক্ষ ও y-অক্ষ এবং O মূলবিন্দু৷ ছক কাগজের উভয় অক্ষ বরাবর ক্ষুদ্রতম বর্গের প্রতি বাহুর দৈর্ঘ্যকে একক ধরি। এখন, ছক কাগজে সমীকরণ (1) থেকে প্রাপ্ত (−2, 6), (0, 3), (2, 0 ) বিন্দুগুলো স্থাপন করি ও বিন্দুগুলো পরপর সংযুক্ত করি। তাহলে, লেখটি হবে একটি সরলরেখা।
একইভাবে, সমীকরণ (2) থেকে প্রাপ্ত (1, 4), (2, 0), (3, – 4 ) বিন্দুগুলো স্থাপন করে এগুলো পরপর সংযুক্ত করি। তাহলে, লেখটি হবে একটি সরলরেখা।
মনে করি, সরলরেখাদ্বয় পরস্পর P বিন্দুতে ছেদ করে। চিত্রে দেখা যায়, P ছেদবিন্দুটির স্থানাঙ্ক (2, 0) I
সমাধান : x = 2
কাজ : 2x - y - 3 = 0 সমীকরণের লেখের উপর ছকের মাধ্যমে চারটি বিন্দু নির্ণয় কর। = অত:পর ছক কাগজে নির্দিষ্ট দৈর্ঘ্যের একক নিয়ে বিন্দুগুলো স্থাপন কর ও এদের পরস্পর সংযুক্ত কর। লেখটি কি সরলরেখা হয়েছে? |
দৈনন্দিন জীবনে এমন কিছু গাণিতিক সমস্যা আছে যা সমীকরণ গঠনের মাধ্যমে সমাধান করা সহজতর হয়। এ জন্য সমস্যার শর্ত বা শর্তাবলি থেকে দুইটি অজ্ঞাত রাশির জন্য দুইটি গাণিতিক প্রতীক, প্রধানত চলক x, y ধরা হয়। অজ্ঞাত রাশি দুইটির মান নির্ণয়ের জন্য দুইটি সমীকরণ গঠন করতে হয়। গঠিত সমীকরণদ্বয় সমাধান করলেই অজ্ঞাত রাশি দুইটির মান পাওয়া যায়।
উদাহরণ ১২. দুই অঙ্কবিশিষ্ট কোনো সংখ্যার অঙ্কদ্বয়ের সমষ্টির সাথে 5 যোগ করলে যোগফল হবে সংখ্যাটির দশক স্থানীয় অঙ্কের তিনগুণ। আর সংখ্যাটির অঙ্কদ্বয় স্থান বিনিময় করলে যে সংখ্যা পাওয়া যাবে, তা মূল সংখ্যাটি থেকে 9 কম হবে। সংখ্যাটি নির্ণয় কর।
সমাধান : মনে করি, নির্ণেয় সংখ্যাটির দশক স্থানীয় অঙ্ক x এবং একক স্থানীয় অঙ্ক y। অতএব, সংখ্যাটি 10x + y ।
১ম শর্তানুসারে, x + y + 5 = 3x . . . (1)
এবং ২য় শর্তানুসারে, 10y + x = (10x + y) – 9 . . . (2)
সমীকরণ (1) থেকে পাই, y - 3x - x – 5, বা, y = 2x – 5 . . . (3)
আবার, সমীকরণ (2) থেকে পাই,
10y – y + x - 10x + 9 = 0
বা, 9y – 9x + 9 = 0
বা, y − x + 1 = 0
বা, 2x – 5 – x + 1 = 0 [(3) হতে y এর মান বসিয়ে পাই]
বা, x = 4
(3) এ x এর মান বসিয়ে পাই, y = 2 × 4 – 5 = 8 – 5 = 3
নির্ণেয় সংখ্যাটি হবে 10x + y 10 × 4 + 3 = 40 + 3 = 43
উদাহরণ ১৩. আট বছর পূর্বে পিতার বয়স পুত্রের বয়সের আটগুণ ছিল। দশ বছর পর পিতার বয়স পুত্রের বয়সের দ্বিগুণ হবে। বর্তমানে কার বয়স কত?
সমাধান : মনে করি, বর্তমানে পিতার বয়স x বছর ও পুত্রের বয়স y বছর।
বর্তমানে পিতার বয়স 32 বছর ও পুত্রের বয়স 11 বছর।
উদাহরণ ১৪. একটি আয়তাকার বাগানের প্রস্থের দ্বিগুণ, দৈর্ঘ্য অপেক্ষা 10 মিটার বেশি এবং বাগানটির পরিসীমা 100 মিটার। বাগানটির সীমানার বাইরে চারদিকে 2 মিটার চওড়া রাস্তা আছে। রাস্তাটি ইট দিয়ে তৈরি করতে প্রতি বর্গ মিটারে 110 টাকা খরচ হয়।
ক) বাগানটির দৈর্ঘ্য x মিটার ও প্রস্থ y মিটার ধরে সমীকরণজোট গঠন কর।
খ) বাগানটির দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ নির্ণয় কর।
গ) রাস্তাটি ইট দিয়ে তৈরি করতে মোট কত খরচ হবে?
সমাধান :
ক)
আয়তাকার বাগানটির দৈর্ঘ্য x মিটার ও প্রস্থ y মিটার।
১ম শর্তানুসারে, 2y = x + 10 (1)
এবং ২য় শর্তানুসারে, 2(x + y) = 100 . . . (2)
খ) সমীকরণ (2) হতে পাই, 2x + 2y = 100
বা, 2x + x + 10 100 [(1) হতে 2y এর মান বসিয়ে]
বা, 3x = 90
বা, x = 30
(1) হতে পাই, 2y = 30 + 10 [x এর মান বসিয়ে]
বা, 2y = 40
বা, y = 20
বাগানটির দৈর্ঘ্য 30 মিটার ও প্রস্থ 20 মিটার।
গ)
রাস্তাসহ বাগানের দৈর্ঘ্য = (30+ 4) মি. = 34 মি. এবং রাস্তাসহ বাগানের প্রস্থ = (20 + 4) মি. = 24 মি.
রাস্তার ক্ষেত্রফল = রাস্তাসহ বাগানের ক্ষেত্রফল - বাগানের ক্ষেত্রফল
= (34 × 24 - 30 × 20) বর্গমিটার।
= (816 – 600) বর্গমিটার।
= 216 বর্গমিটার।
ইট দিয়ে রাস্তা তৈরি করার খরচ = (216 × 110) টাকা = 23760 টাকা
উদাহরণ ১৫. ঘড়ির ঘণ্টা ও মিনিটের কাঁটা কতবার একটির উপরে আরেকটি বসে? সময়গুলো নির্ণয় কর।
সমাধান: মনে করি, টা y মিনিটে ঘণ্টা ও মিনিটের কাঁটা একটি আরেকটির উপরে বসে। মনে রাখতে হবে x (সুবিধার্থে x 0,1, . . . 11 যেখানে 0 প্রকৃতপক্ষে 12 বোঝাবে) পূর্ণসংখ্যা হলেও y কিন্তু পূর্ণসংখ্যা নাও হতে পারে। আমরা জানি মিনিটের কাঁটা ঘণ্টার কাঁটার তুলনায় 12 গুণ বেশি দ্রুত চলে। x টার সময় ঘণ্টার কাঁটা ঠিক x লেখার উপরে এবং মিনিটের কাঁটা 12 এর উপরে ছিল। মিনিটে ঘন্টার কাঁটা এবং মিনিটের কাঁটা y ঘর অতিক্রম করবে। তাই
প্রথম ও শেষ সময় দুইটি একই সময় বলে কাঁটা দুইটি 11 বার মিলিত হবে এবং সময়গুলো হলো x টা মিনিট।
আরও দেখুন...